Header Ads

Header ADS

পারিবারিক কলহের রহস্য কি? পারিবারিক কলহের ফলাফল কি? কিভাবে আমরা আমাদের পারিবারিক কলহের সমাধান করতে পারি?


   লেখার শূরুতে সম্মানিত পাঠক কে আমার পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি ভাল আছেন। আপনাদের দোয়া ও আশীর্বাদে আমিও ভাল আছি।আপনাদের মানসিক সেবায় আমি আজ পারিবারিক সমস্যা নিয়ে আলোকপাত করার ইচ্ছে পোষণ করছি।পাঠক মহোদয়ের উৎসাহ ও ক্ষমাসুন্দর দৃ্ষ্টির আশ্বাস থাকলে একটু সাহস পাই। আশা করি আমার প্রত্যাশার প্রতিফলন দেখতে পাব।

আসলে আমাদের ব্যক্তি জীবনে কত সমস্যাই না আসে। কিছু সমস্যা আমরা সমাধান করে নিতে পারি। আবার কিছু সমস্যা আমরা সহজে সমাধান করতে পারিনা। যেগুলো সমস্যা আমরা সহজে সমাধান করতে পারিনা, সেই সমস্যাগুলো আমাদেরকে কষ্টে রাখে। এমন হাজারো সমস্যার মাঝে অন্যতম একটি সমস্যা হচ্ছে পারিবারিক সমস্যা। এই সমস্যাটি এতোটা মারাত্মক আর এতোটা জঘন্য যে, এটাকে কেন্দ্র করে আবির্ভাব হয় আরো অনেক সমস্যার। এই সমস্যার কারণে ভেঙ্গে যায় সাজানো সংসার। সংসারের সদস্যদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি হয়। শুরু হয় ভুল বুঝাবুঝি।দ্বন্দ্ব, মারামারি, খুন সহ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে থাকে। আর এরকম নজির ভুড়িভুড়ি আছে। আমরা কি কখনো ভাবি, কেন এসব সমস্যার উদ্ভব হয়? কেন আমরা এগুলো সমাধান করতে পারিনা? হয়তোবা ভাবি কিন্তু কাজ হয়না। কাজ হবে কি করে, আমাদের আশেপাশের সিংহভাগ লোকেরাই তো চায়, সুখী পরিবারগুলোর মাঝে অশান্তি তৈরী হোক। বিভেদ তৈরী হোক পরিবারের সদস্যদের মাঝে। বিশেষ করে আমাদের মাঝে যে পরিবারের মানুষগুলো নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যাপারে পরের কথা শুনি, পরের বুদ্ধিতে মাতামাতি করি, তারাই অন্যের চক্রান্তের শিকার বেশি হই। কিন্তু একটি বারের জন্যও চিন্তা করিনা যে, পরিবারের কেউ আমাদের শত্রু নয়। বরং আসল শত্রু তো সে, যে কৌশলে পরিবারের মাঝে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করেছে। সুদৃঢ় ভালবাসার বন্ধনগুলোকে শত্রুতায় পরিণত করেছে। তাই আমি আজ সে বিষয়টি সম্পর্কে আমার নিজস্ব মতামতসহ ’অপরাধ আইন’ ‘অপরাধ বিজ্ঞান” ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০’, ’নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০৩ (সংশোধিত)’ ’বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্ত্বি’ এবং মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ-১৯৬১’ এর আলোকে তুলে ধরার প্রয়াস পাব। আশা করি পাঠক মহোদয় পাঠ করে উপকৃত হবেন।

তাহলে এবার মূল আলোচনায় আসা যাক। প্রথমে আমরা পারিবারিক কলহ/বিরোধ সম্পর্কে ‍কিছু কথা তুরে ধরব।


পারিবারিক কলহের রহস্য কি?
প্রত্যেক ঘটনা প্রবাহের কোন না কোন কারণ থাকে। তেমনি পারিবারি কলহের পিছনেও কোন না কোন কারণ বা রহস্য নিহিত আছে। যা আমাদের দৈনন্দিন জীবরের ঘটনা প্রবাহ, সামাজিক অবস্থা, বিভিন্ন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে বুঝতে পারি। আজকের এই আলোচনায় আমি এই কারণগুলিই তুলে ধরব, যা পাঠকবৃন্দকে সচেতনতা উপহার দেয়ার নিমিত্তে আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা মাত্র। এখন আমরা জানবো, পারিবারিক কলহের রহস্যগুলি কি কি?

পারিবারিক কলহের কারণগুলিকে আমরা সাধারণত দুই শ্রেণিতে বিন্যাস করতে পারি। প্রথমত: ব্যক্তিগত কারণ আর দ্বিতীয়ত: পরিবেশগত কারণ। এই দুটি শ্রেণির আলোকেই ‍বিস্তারিত তুলে ধরছি...
ব্যক্তিগত কারণ ঃ-
ব্যক্তিগত কারণ বলতে কোন ব্যক্তির মানসিক অবস্থা, ইচ্ছা-আকাঙ্খা, চিন্তা চেতনা, দৃষ্টিভঙ্গিকে উদ্দেশ্য করা হচ্ছে। সবার জন্য আসলে পরিবেশগত কারণ থাকতে হয়না। কিছু মানুষ নিজে থেকেই অপরাধী হয়ে উঠে। আর তার পিছনে দায়ী থাকে ব্যক্তির ইচ্ছা-আকাঙ্খা, চিন্তা চেতনা, আর দৃষ্টিভঙ্গি। ব্যক্তিগত কারনগুলির মধ্যে নিম্নোক্ত কারণগুলি প্রাণিধান যোগ্য বলে উল্লেখ করছি।

১। সংকীর্ণ্ মানসিকতা ঃ-
সংকীর্ণ্ মানসিকতা কোন ব্যক্তির পারিবারিক কলহে জড়িয়ে পড়ার কারণ হতে পারে। ছোটখাট বিষয়াদি ‍ছাড় দিতে না পাড়া, কিংবা কোন ছোটখাট বিষয়কে অনেক বড় করে  দেখার কারণে কোন ব্যক্তি এরকম কলহে জড়িয়ে পড়তে পারেন।

২। স্বার্থপরতা ঃ-
আমি মনে করি একই পরিবারের সদস্যদের মাঝে কোন প্রকার স্বার্থপরতা থাকা উচিৎ না। এইটা পরিবারে স্বার্থপরতা দেখানোর পিছনে কি এমন কারণ থাকতে পারে? পরিবারের একজন যদি কোন কিছু একটু বেশি ্গ্রহণ করতে চায়, করুক না।কি এমন ক্ষতি হবে তাতে? সে তো আর পর কেউ নয়। যাস্ট এখানে কেউ যদি ছাড় না দিয়ে স্বার্থপরতা দেখায়, সূত্রপাত হতে পারে পারিবারিক কলহের।

৩। ব্যক্তিগত আক্রোশ ঃ-
কারো প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশও পারিবারিক কলহের কারণ। কিছু মানুষ একত্রে বসবাস করলে সেখানে ছোটখাট কিছু ঝামেলা হতেই পারে। কিন্তু এই ধরনের কোন বিষয় যদি কোন সদস্য সিরিয়াসভাবে নিয়ে থাকেন কিংবা তা নিয়ে যদি কারো প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশ রাখেন, তবে তা পরবর্তীতে পারিবারিক কলহে রুপ নিতে পারে।

৪। সুবুুদ্ধি ও সুবিবেচনাবোধের অভাব ঃ-অনেক মানুষই এমন আছেন, যাদের মাঝে ‍সুবুদ্ধি ও সুবিবেচনাবোধের অভাব পরিলক্ষিত হয়। কোনটা বলা সঠিক আর কোনটা করা সঠিক তা অনুভব করার শক্তিও যেন তাদের নেই। বুঝতে পারেনা কোনটা তার জন্য কল্যাণকর। এমন ব্যক্তিও কখনো কখনো পারিবারিক কলহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।


৫। ধৈর্যের অভাব  ঃ-

জীবনকে সুন্দরভাবে গড়াতে হলে ধৈর্য অবশ্যই প্রয়োজন। তাৎক্ষণিক নেয়া কোন সিদ্ধান্ত সবসময় ভাল ফলাফল দিতে পারেনা। আর তাৎক্ষণিক করা কোন কাজও ভাল হতে পারেনা। কারো ক্ষেত্রে তা সফল হলেও তা ব্যতিক্রম। আর ব্যতিক্রম কখনো উদাহরণ হতে পারেনা। পরিবারে সবার মাঝে সুন্দরভাবে থাকতে হলে এই ধৈর্যই অবশ্যই প্রয়োজন। যে কোন প্রকার ‍বিরুপ পরিস্থিতি ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করতে হবে। ধৈর্য ছাড়া সবসময় সব পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব হয়না। যার দরুণ শুরু হতে পারে পারিবারিক কলহ।

৬। রাগের আধিক্যতা ঃ-

ধৈর্য যেখানে অনুপস্থিত সেখানে রাগের বাসস্থান। যার ধৈর্য নেই তার রাগ বেশি। ঠিক আগুন পানির মতোই। এক সাথে বসবাস করতে পারেনা। আগুনের শক্তি বেশি হলে পানিকে বাস্পে পরিণত করে উড়িয়ে দেয়। আর পানির শক্তি বেশি হলে আগুনকে নিভিয়ে দেয়। সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী অবস্থান। তাই খেয়াল করবেন ধৈর্য যার কম, রাগ তার বেশি। আর রাগ বেশি কোন মানুষ পারিবারিক কলহের জন্য বেশিরভাগ সময়ই দায়ী থাকেন।


......................................................................................................................................................


⇒পরিবেশগত কারণ ঃ-
পারিবারিক কলহের পিছনে কিছু ব্যক্তিগত কারণের পাশাপাশি পরিবেশগত কারণও রয়েছে। যা আমরা উপেক্ষা করতে পারিনা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তির কলহে জড়িয়ে পড়ার সুনির্দিষ্ট কোন কারণকে যৌক্তিক মনে হতে পারে। এজন্যই এই ধরনের কারণগুলিকে আমরা পরিবেশগত কারণ হিসেবে গণ্য করতে পারি। নিম্নে এমন কিছু কারণ তুলে ধরছি।

১। সুশিক্ষার অভাব ঃ-
’শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’ কথাটি শতভাগ সত্যি মনে হলেও আমার কাছে মনে হয় কথাটির মাঝে অপূর্ণতা আছে। কারণ শিক্ষিত তো সবাই হতে পারে কিন্তু সুশিক্ষিত কয়জন হতে পারে? বাহিরে বের হলেই আমরা দেখতে পাই যে অনেক উচ্চশিক্ষিত মানুষেরাই তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কলহে জড়িয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, বরং পরিবারের অন্য সদস্যদের ঠকিয়ে তিনি একাই সকল স্বার্থ ভোগ করছেন। স্বল্পশিক্ষিত আর মূর্খ মানুষেরা কখনো শিক্ষিত মানুষের সম্পদ বেআইনিভাবে ভোগ করেনা। যেখানে প্রত্যহ তারা শিক্ষিতদের দ্বারা শোষিত হচ্ছে। হোক সে স্বল্পশিক্ষিত আর নিরক্ষর ব্যক্তিরা একই পরিবারের সদস্য। কারণ, সেই শিক্ষিত ব্যক্তিরা শিক্ষিত মানুষ কিন্তু সুশিক্ষিত নয়।

২। পারিবারিক আদর্শের ত্রুটি ঃ-
কোন কোন পরিবারে পারিবারিক আদর্শের ত্রুটি থাকার কারণে সদস্যরা সুন্দর মানসিকতা নিয়ে গড়ে উঠতে পারেনা। কারণ, প্রতিটা মানব শিশুর জন্য প্রথম ও আদর্শ্ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে পরিবার। পরিবারের বড় সদস্যদের থেকেউ ছোটরা অনুকরণ করে শিখে। তাই ত্রুটিপূর্ণ পারিবারিক আদর্শ পারিবারিক কলহের জন্য দায়ী।

৩। পরিবারের সদস্যদের প্রতিহিংসা ঃ-
আমরা যে ধর্মের অনুসারীই হই না কেন, হিংসা কিন্তু কারো জন্যই ভাল নয়। হিংসা মানুষের মাঝে বিবাদ তৈরী করে। মানুষের মাঝে শত্রুতা তৈরী করে। আপন মানুষকে আপনজনদের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। পরিবারের সদস্যদের মাঝে হিংসা থাকলে তো আরো বিপজ্জনক। সুন্দর সাঁজানো সংসার ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এরকম কিছু নজির আছে যা আমি আপনাদের কাছে  পরিস্কার রুপে তুলে ধরতে প্রয়াস পাচ্ছি। যেমন ঃ-
{ক} পরিবারের কোন সদস্য বেশি টাকা রোজগার করছেন, এটা অন্য কেউ ভালো চোখে দেখেন না।
{খ} হয়তোবা কেউ বেশি টাকা রোজগার কারীকে কিংবা তার সহধর্মীনিকে কুবুদ্ধি দিয়ে সংসারের মাঝে অশান্তি তৈরী করার চেষ্টা করছে।
{গ} কোন একজন হয়তোবা ভাবছে, এই সংসারটা এতো সুন্দরভাবে চলছে কি করে। একটু ঝামেলা বাঁধানো দরকার।

৪। বাস্তবতাকে সাদরে গ্রহণ করতে না পারা :- 
বিয়ের আগে ও বিয়ের পরে প্রতিটা মানুসের জীবনাচরণে পরিবর্তন আসবে এটা স্বাভাবিক ও বাস্তব। কিন্তু অনেক পরিবারের মুরুব্বিগন এই বাস্তবতাটা মেনে নিতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে যদিও দুই পক্ষেরই কোন না কোন দিক থেকে ব্যর্থতা থাকতে পারে।কারো দ্বারা হয়তোবা উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী করতে ব্যর্থ হওয়া কিংবা উপযুক্ত গার্ডিয়ান কর্তৃক সঠিকটা বুঝাতে না পারা। এমন কিছু কারণ আছে যা আপনারা হয়তোবা ভাবেন কিন্তু বলতে পারেন না। আমি আজ একটু খোলাসা করে বলছি....ধরুণ আপনি এখনো বিয়ে করেন ‍নি। এমতাবস্থায় যে কোন কিছুর প্রয়োজন হলে কি করেন? মাকে বলেন। কিংবা বোন কে বলেন। আর না হয়ে আপনার কোন ভাই কে বলেন {মা আমাকে খাবার দাও, মা আমাকে টাকা দাও, মা আমার শার্ট টা কই? আমার জুতো জোড়া আছে তো? টুকটুকি, আমার ব্যাগটা আন তো। বাইরের গেঞ্জিটা ঘরে তুলিস}। কিন্তু বিয়ের পর আপনি কি করবেন। নিশ্চয়ই এই কথাগুলো আপনার বউ কে বলবেন। বিভিন্ন প্রয়োজনের তাগিদে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় মা কে হয়তোবা আপনি দিনে অন্তত বিশ থেকে ত্রিশবার ডাকেন। কিন্তু বিয়ের পর যখন আপনি এসব কথা আপনার বউকে বলছেন, তখন অটোমেটিক্যালি আপনি আপনার মাকে আগের চেয়ে অর্ধেক ডাকছেন। আপনার বোন কে অর্ধেক ডাকছেন। এই যে হঠাৎ করেই ডাকাডাকির ঘাটতি, এটা নিশ্চয়ই মা’র পক্ষে কঠিন হয়ে পরে মেনে নেওয়া। তখন মনে করে, এখন তো তোমার বউ হয়েছে। এখন সেই সব। এখন আর আমাদের দরকার হয় না। কিন্তু এটা যে বাস্তব, তা তারা তাৎক্ষণিকভাবে মেনে নিতে পারেনা।

    আরো একটি ব্যাপার আছে, ধরুন আপনি চাকরীর সুবাদে বাইরে থাকেন। বাসায় থাকা সম্ভব হয়না। এবার বিয়ের পর আপনি কি করবেন? আপনার স্ত্রী কে বাড়িতে রাখবেন নাকি আপনার সঙ্গে নিয়ে যাবেন? এই প্রশ্নটা যদি একশজন যুবক কে করা হয়, আমার মনে হয় ৯৫% যুবকই বলবে সঙ্গে নিব। আপনারা কি জানেন, ধর্মও এই ৯৫% যুবকের কথাই বলে? যতদিন পর্যন্ত কোন মেয়ে কোন পুরুষের সাহচর্য্য না পায় ততদিন পর্যন্ত প্রত্যেক নারী একা একা (পুরুষ থেকে দূরে) থাকতে পারে। কিন্তু যখন কোন নারী কোন পুরুষের সাহচর্য্য তখন আর সে একা থাকতে পারেনা। কারণ, প্রতেকেরই যৌবন বলতে কিছু আছে। আর সে যৌবনের সময় থাকতে মূল্য না দিতে পারলে তা কি কখনো সফল হয়? আপনি হয়তোবা এক্ষেত্রে নারীকেই দোষারোপ করবেন। বলবেন যে, মেয়েটি অসতী। তর্কের খাতিরে মানলাম মেয়েটি অসতী। কিন্তু তাকে অসতী হওয়ার পিছনে দায়ী কে জানেন? স্বামী নামের পুরুষটি। সে বুঝেনি তার সহধর্মিনীর মনের চাওয়া পাওয়া। মূল্যায়ন করেনি তার যৌবনের চাহিদার। তাই সে আজ অসতী হয়েছে।আমরা বেশ ভালো করেই জানি বর্তমান সময়ের সামাজিক অবস্থা। জানি মানুষের নৈতিক অবস্থা। তাই শুধু ঐ নারীকেই দোষারোপ না করে একটু খেয়াল করে দেখবেন স্বামীহীন নারীদের প্রতি সমাজের পুরুষেরা কেমন মানসিকতা দেখায় আর কেমন দৃষ্টিভঙ্গিতে তাকায়। আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন এই বিষয়গুলি? দেখেননি। এই লেখার মাধ্যমে আমি একটু ভেবে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি। আহ্বান জানাচ্ছি আপনাকেও, স্বামীহীন সুন্দরীদের প্রতি আপনি কি মানসিকতা দেখান?

    আপনি হয়তোবা বলবেন এই বিষয়গুলো প্রত্যেক বুঝতে পারে কিন্তু বুঝতে পারেনা শুধু আপনার বাবা মা তাই না?  সবাই সঠিক বলে শুধু বিপরীত বলে আপনার বাবা-মা, তাই না? আপনার কাছে এমনটা মনে হতে পারে। তাতে সমস্যা না। তারা হচ্ছে আগের জেনারেশনের মানুষ। বর্তমান জেনারেশনের ছেলেমেয়েদের মানসিকতা আর তাদের মানসিকতার মাঝে বিস্তর পার্থক্য থাকবে। আর থাকাই স্বাভাবিক। এটা আপনাকে ম্যানেজ করে নিতে হবে। আপনাকে সঠিকটা তুলে ধরতে হবে তাদের কাছে। বুঝাতে হবে আপনাদের মনের চাওয়া পা্ওয়াকে। মনে রাখবেন, আপনার বাবা-মার সেবা করার জন্য আপনার স্ত্রী কিন্তু দায়বদ্ধ না। তিনি যাস্ট নৈতিকতা ও মানবিকতার দিক থেকে সেটা করতে পারেন। আপনার বাবা-মার সেবা করার জন্য মূলত আপনি বাধ্য এবং দায়বদ্ধ।


৫। ধর্মীয় শিক্ষার অভাব ঃ-
প্রত্যেক ধর্মই তার অনুসারীদের ভাল মানুষ হতে শিক্ষা দেয়। কোন ধর্মই চায়না যে, তার অনুসারীরা ধর্মবিরোধী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ুক। কারণ, কোন ধর্মের অনুসারীরা যদি খারাপ হয়, তখন অন্য ধর্মের অনুসারীরা তাকে দায়ী করার পাশাপাশি ধর্মকেও দায়ী করে থাকেন। তাই ধর্ম চায়, প্রতিটি মানুষ নিজ ধর্মীয় বিষয়াদির ব্যাপারে শিক্ষা গ্রহণ করুক। প্রতিষ্ঠিত করুক নিজেদেরকে একজন ভাল মানুষ হিসেবে।

৬। ধর্মীয় অনুশাসনের অভাব ঃ-
অনেকে ধর্ম মেনে চলার কথা বলেন। বলেন, আমি ধর্মকে মেনে চলি। কিন্তু ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে পারেন না। কারণ, ধর্মীয় অনুশাসন মানলে অনেক কাজই তিনি করতে পারেন না। তাই তিনি বলেন, ধর্মের কথা কি সবখানেই মানতে হবে? যেখানে প্রতিটা পরিবার ধর্মীয় অনুশাসনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত সেখানে পারিবারিক ‍বিষয়গুলিকে আমরা কিভাবে ধর্মীয় অনুশাসনের বাইরে রাখি কি করে? শুধু ধর্মীয় শিক্ষা নিলেই হয়না। ধর্মীয় শিক্ষা বাস্তবজীবনে প্রয়োগ না করার কারণে ধর্মীয় অনুশাসনের যে অভাব পরিলক্ষিত হয়, তা নিঃসন্দেহে পারিবারিক কলহের কারণ।

৭। প্রতিবেশিদের প্রভাব ঃ-
প্রতিবেশিদের আচরণগত প্রভাবও কোন পরিবারের পারিবারিক কলহের কারণ হিসেবে গন্য করা হয়। প্রতিবেশিদের আচরণ থেকে শেখা, তাদের আচরণে প্রভাবিত হওয়া, তাদের উস্কানিমূলক কথা, এগুলো কোন পরিবারের কলহের কারণ হিসেবে বিবেচ্য।

৮। বড়দের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব ঃ-

সমাজে অনেক ব্যক্তিই আছেন, যারা নিজেকে বড় করে জাহির করতে সর্বদা সচেষ্ট। আর এ বড়ত্বের মোহে এক সময় তারা অন্ধ হয়ে যান। তখন বুঝতে পারেন না ভালমন্দ। আর এমন মানসিকতাও অনেক সময় পারিবারিক কলহের কারণ হিসেবে গণ্য করা যায়। শুধু তিনি একাই নন। তার বড়ত্ব আর  অহংকারী  মনোভাবের কারণে প্রতিবেশিদের মাঝেও এর প্রভাব পড়ে।

৯। আর্থিক প্রতিযোগিতার প্রভাব ঃ-

কথায় বলে অর্থই সকল অনর্থের মূল। কখনো কখনো তা আবার সকল মন্দ কাজেরও মূল। কারণ মানুষেরা যত প্রকার দাঙ্গায় জড়িয়ে পরে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অর্থ। আর পরিবেশগত কারণের মধ্যে্ এটিও একটি। আর্থিক প্রতিযোগিত মানুষকে পরিবারের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পরতে উঃসাহিত করে।

১০। উত্তরাধিকার সম্পত্তি বন্টনে সমস্যা ঃ-

বিভিন্ন পরিবারে দেখা যায়, যারা পরিবারের অভিভাবক থাকেন, তারা তাদের সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার করেন না। সেক্ষেত্রে পারিবারিক কলহ তৈরী হতে পারে। আবার কোন ক্ষেত্রে দেখা যায়, পরিবারের কোন একজন সদস্য অভিভাবকদের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে বাধা গ্রস্থ করছে কিংবা বন্টনযোগ্য সম্পত্তি জোর করে বেদখল করার চেষ্টা করছে। সেক্ষেত্রেও পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হতে পারে।

১১। কলহ প্রবণতা ঃ-

সমাজে এমনও অনেক পরিবার দেখা যায়, যে পরিবারের লোকজনেরা কলহ প্রিয় হয়ে থাকে। তারা নিজেদের মাঝে যেমন কলহ ঝামেলায় জড়িয়ে থাকে, তেমনি সমাজের অন্য পরিবারের লোকজনের মাঝেও কলহ তৈরীতে আনন্দ পেয়ে থাকে। তারা মনে করে লোকেরা ভাল থাকবে কেন? নিঃসন্দেহে এরকম কোন মনোভাবও কোন পরিবারে কলহ সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট।

১২। মাদকাসক্ততা ঃ-

কিছু পরিবার আছে যে পরিবারের মানুষগুলো শান্তিতে থাকতে চায়। কিন্ত হঠাৎ করে সেই পরিবারের কোন একজন বিপথগামী হয়ে মাদকের সাথে জড়িয়ে পরে। এক পর্যায়ে সে তার মাদকের চাহিদা পূরণের নিমিত্তে টাকার জন্য পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি করে। আর ্একজনের কারণেই পুরো পরিবারের মাঝে কলহ সৃষ্টি হয়।

১৩। পরনারী আসক্ততা ঃ-

অনেক পুরুষ আছেন, যারা নিজের বিবাহিত স্ত্রী বর্তমান থাকা স্বত্ত্বেও ভিন্ন কোন নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পরে। স্ত্রীর হক যথাযথভাবে আদায় করেনা। বরং সে ধর্মের অনুশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অনায়াসে ঐ কাজ করে যায়। আর নষ্ট করে পারিবারিক শান্তি।

No comments

Theme images by Lingbeek. Powered by Blogger.