Header Ads

Header ADS

বঙ্গবন্ধুকে সত্যি কতটা ভালবাসি?

বঙ্গবন্ধুকে সত্যি কতটা ভালবাসি ?


  
বাংলাদেশ। আমার জন্মভূমি। লাল সবুজের ছায়া ঘেরা আমার এই দেশ। যে দেশের পুরো প্রকৃতি থাকে সবুজে আচ্ছন্ন। বর্ষার বৃষ্টি যখন এই সবুজকে ভিজিয়ে দেয় তখন তো আমি নতুন করে বাংলার প্রেমে পড়ে যাই। কি অপরুপ আর কি মায়াবী সেই দৃশ্য ! আচ্ছা আপনি নিশ্চয়ই এই ‍মুহুর্তে এই লেখাটির পাঠক? তাই আপনাকেই বলছি, আপনি কি বর্ষাকালে কখনো এই বাংলার চরাঞ্চল ভ্রমন করেছেন? আপনি কি দেখেছেন সেখানে বর্ষাকালে কেমন লাগে? কেমন হয় তখন মনের অনুভূতি? যদি ভ্রমন করে থাকেন তবে বলতে পারবেন। নচেৎ আমি নিশ্চিত আপনি বলতে পারবেন না। জানেন, বৃষ্টির পর যখন চরাঞ্চলে বের হবেন, দেখবেন বাতাসে কোন ধূলিকণা নেই। নেই কোন দূষণের ছোঁয়া। নেই বিরক্তিকর যান্ত্রিক কলধ্বনি। আর নেই মানুষের ভীরের মাঝে শরীরের ঘামের গন্ধ। যখন দৌড়াবেন, সর্বোচ্চ গতিতে দৌড়াতে ইচ্ছা করবে। যখন নিশ্বাস নিবেন, তখন বুক ফুলিয়ে নিশ্বাস নিতে ইচ্ছা করবে।

    আমি বিশুদ্ধতার কথা কেন বললাম জানেন? সকল প্রকার বিশুদ্ধতার মাঝে এক ধরনের নিষ্কলুষ তৃপ্তি আছে। যা আপনি কোন অবিশুদ্ধ ভালবাসার মাঝে পাবেন না। আপনি কি কাউকে এমনভাবে ভালবাসেন, যা কেবল লোক দেখানো? আপনি কি কাউকে এমনভাবে ভালবাসেন, যা কেবল আনুষ্ঠানিকতা দেখানোর জন্য? যদি তাই করে থাকেন, তবে কিন্তু আপনি বিশুদ্ধ প্রেমিক না। আপনি কিসের মাঝে গণ্য হবেন জানেন? উত্তরটা আপনিই দিবেন। আমি দিলাম না।

   আমার ওয়েবসাইটে এটিই হচ্ছে আমার প্রথম লেখা, যা আমি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখতে চাই। কারণটা হচ্ছে, এই মুহুর্তে আমি যতগুলো মানুষকে মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালবাসি, তাদের মধ্যে তিনি  একজন। তাকে নিয়ে লেখা বাজারে অসংখ্য বই আছে, যার সবকটিই আমার পড়া হয়নি। কিন্তু যারা পড়েছে তাদের কাছে আমি তার সম্পর্কে শুনেছি। একসময় তার সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতাম না। এখনো হয়তোবা অনেক কিছুই জানিনা। তারপরেও বলব, আমি অনেক কিছুই জানি। যে বাংলাদেশের আলো বাতাসে আমার বেড়ে উঠা, সেই বাংলার জনক তিনি। এর চেয়ে আর কি বেশি জানা প্রয়োজন বলেন? ভালবাসাটা এমনি এমনি আসেনা। তা অর্জন করতে হয়। ব্যক্তিস্বার্থ আর সুখ কে পরিত্যাগ করতে পারার কারণেই তিনি তা অর্জন করতে পেরেছিলেন। যেখানে একজন স্বাধীন মানুষ একটি মাত্র দিনও কারাগারে কাটাতে চান না, সেখানে তার মুল্যবান জীবনের 4,682 দিন তাকে কারাগারে কাটাতে হয়েছে। কেন জানেন? শুধূ এই বাংলাদেশের জন্য। এই বাংলাদেশের মানুষের অধিকারের জন্য। তাই, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করে, যারা এই বাংলাদেশের মাটিকে নিজের অস্তিত্বের সাথে কল্পনা করতে পারে, তারা নিশ্চয়ই বঙ্গবন্ধুকে হৃদয় থেকেই ভালবাসে।

    ভালবাসার মাঝে বিশুদ্ধতা প্রয়োজন। বিশুদ্ধতা না থাকলে ঐ অনুভুতিকে কখনো ভালবাসা বলা যায়না। তা রীতিমত ভালবাসার সাথে প্রতরণা। যা আমাদের সমাজে অহরহ দেখা যায়। আর এমন কিছু ঘটনা আমি প্রত্যক্ষ করেছি, যা ছিল খুবই স্পর্শকাতর। এক ধরনের মানুষ আছে, যারা কেবল সবকিছুর মাঝে আনুষ্ঠানিকতা দেখায়। বাস্তবে কিন্তু আসলে তা বিশুদ্ধ না। আমি এরকম অনেক দেখেছি। আমার কাছে এটা শ্রেয় মনে হয়না। আমি  মনে করি, যে ব্যক্তি সামনে সম্মান পাওয়ার যোগ্য, সে পশ্চাতেই সম্মান পাওয়ার যোগ্য। যাকে আমি আনুষ্ঠানিক ভালবাসা দেখাবো, তাকে মন থেকেও ভালবাসবো। আমি এরকম ঘটনাগুলি থেকে কেবল একটি ঘটনা তুলে ধরব, যা অন্য সব ঘটনাগুলির ইঙ্গিত বহন করবে।


    দক্ষিণ কমলাপুর জামে মসজিদ গলি। একটি পরিচিত জায়গার নাম। বিশেষ করে কমলাপুর এরিয়াতে যারা বসবাস করেন তাদের কাছে। এই গলিতেই অবস্থান বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ব্যাচেলর হাউস (সরদার কলোনি)। যেখানে তিন হাজার প্লাস লোক অবস্থান করে যাদের প্রায় 95% বিবাহিত। কিন্তু তাদের অর্ধাঙ্গীকে সঙ্গে না রাখায় তারাও এখানে ব্যাচেলর। এটা প্রত্যেকের জন্য কষ্টকর হলেও বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে সবাই এভাবেই অবস্থান করছেন।

    যাই হোক, উপরের এই ছবিটা দক্ষিণ কমলাপুর জামে মসজিদ গলি থেকে তোলা। উনি মুরুব্বি, কাঁচামালের বিজনেস করেন। যে ব্যানারটির উপর বসে আছেন, তা ”উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজ” এর শোক দিবস পালনের ব্যানার। শোক দিবস পালনের পর নিশ্চয়ই ব্যানারটির প্রয়োজন শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই তারা  মুরুব্বির কাছে বিক্রি করে  দিয়েছে। এবার মুরুব্বি কি করছেন? ঐ ব্যানারটি বিছানা বানিয়ে সবজি বিক্রি করেন। এতদূর পর্যন্ত কোন সমস্যা নেই। সমস্যাটা হচ্ছে যখন তিনি সেটা ব্যবহার করছেন, অবচেতন ভাবেই একটা কাজ করছেন, যে কাজটা আমার কাছে পছন্দনীয় নয়। বরং তা রীতিমত খারাপ লাগার বিষয়। মুরুব্বি যেখানে সবজি বিক্রয় করতে বসেন, তার সামনেই আরেক মুরুব্বির বিকাশ আর ফ্লেক্সিলোডের দোকান আছে। বিকাশ আর ফ্লেক্সিলোড সংক্রান্ত প্রয়োজন মিটানোর জন্য অধিকাংশ সময় আমি তার কাছেই যাই। তো লোড সংক্রান্ত ব্যাপারে আমি একদিন তার কাছে গিয়েছিলাম। লোড শেষে ফিরে আসার সময় সবজি বিক্রেতার দিকে নজর পরল। তিনি সবজি বিক্রয় শেষে সব গুছিয়ে সম্ভবত  চলে যাবেন। তাই তিনি বিছানা পরিষ্কার করছেন। লক্ষ্য করুন, ওনার সামনে কিছু পেঁয়াজ রাখা আছে। পেঁয়াজের নিচেই বঙ্গবন্ধুর ছবি আছে। তো সেদিন এই ব্যানারটি একটু ঘুরানো ছিল। মানেটা হচ্ছে, ব্যানারের পশ্চিম মাথা সেদিন পূর্বপার্শে ছিল। আর তিনি ব্যানারটি পরিষ্কার করছিলেন। আর ঠিক সেই সময় তিনি সেই রত্ন, যাকে আমরা বাংলার জনক বলে সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি, তার প্রতিকৃতির উপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পা দিয়ে পরিস্কার করছিলেন। আমি তখন তাকে কিছু্ই বলিনি। কিন্তু মনে মনে খুব খারাপ লাগছিল। কি করব আর কি বলব বুঝতে পারছিলাম না। তাকে কিছু না বলেই রুমে আসলাম সেদিন। কিন্তু কেমন যেন একটা খারাপ লাগা কাজ করছিল। সিদ্ধান্ত নিলাম, ‍এ ব্যাপারে আমি ‍মুরুব্বির সাথে কথা বলব। কয়েকদিন পর আমি সেই বিকাশের দোকানে গেলাম। সঙ্গে কিছু টাকাও  নিয়েছিলাম। একটা উদ্দেশ্য ছিল বলে। লোডের দোকানে লোডের কাজ সেরে আমি আংকেলের সাথে কথা বলার জন্য ওনার কাছে আসলাম। প্রথম জিজ্ঞেস করলাম, আংকেল, এই ব্যানারটা আপনি কই পাইছেন? যদিও ব্যানারের উপন স্কুলের নাম লিখা ছিল, তবুও ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম  ওনার মুখে শুনব বলে। তিনি বললেন, স্কুল থেকে কিনে আনছি। বললাম, কতটাকা দিয়ে কিনে আনছেন, আমাকে ব্যানারটা দিয়ে দেন আমি টাকা দিচ্ছি। বাজার থেকে আপনি নতুন একটা কাগজ কিনে নেন। তিনি রাজি হলেন না। বললাম, দেখেন আংকেল,  এ ব্যানারটা আমার খুব দরকার। আপনি নতুন একটা কিনে নেন। তিনি জানালেন, অনেক কষ্ট করে আমি এই ব্যানারটা সংগ্রহ করেছি। এটা দেয়া যাবেনা। কি আর করব? রুমে চলে আসলাম। কিন্তু  একটু রাগ নিয়ে চলে আসার দরুন তার কাছে শোনাই হয়নি, তিনি ব্যানারটি আসলে কত টাকা দিয়ে কিনেছেন। আমার মনের মাঝে খারাপ লাগাটা এখনো বিরাজ করছে। কারণ, তিনি এখনো ব্যানারটি  ব্যবহার করছেন, যদিও তা একটু পুরাতন হয়ে গেছে। সেই ঘটনার দিনটা ছিল আজ থেকে প্রায় দু-মাস আগের। কিন্তু আমি সেটা তার কাছ থেকে টাকা দিয়েও কিনে নিতে পরিনি। কেউ কোনদিন হয়তোবা সেটা খেয়ালও করেনি।

    আমি তার ঐ কাজটিতে যতটা না ক্ষিপ্ত, তার চেয়ে বেশি ক্ষিপ্ত আমাদের অবিশুদ্ধ মনের উপর। তিনি হয়তোবা অবচেতনভাবেই সেটা করছেন। কিন্তু অন্য হাজার হাজার শিক্ষিত মানুষেরা কি করছে? ভালবাসা নিয়ে নাটক করছে। আনুষ্ঠানিকতা প্রকাশ করছে। বিভিন্ন মিটিং মিছিলে তার ছবি দিয়ে ব্যানার পোস্টার আর ফেষ্টুন বানিয়ে তা পরিত্যক্ত হলে তা আবার পদদলিত করছে। এরকম অহরহ ঘটছে। কিন্তু কেন? কেউ কি একটু সতর্ক হচ্ছেনা? কেউ কি একটুেও ভেবে ‍দেখেছেনা যে, তারা যে কাজটি করছে তা আরেকজন সম্মানিত মানুষের জন্য অসম্মানজনক? আমি মনে করি প্রত্যেকে তার নিজ অবস্থান থেকে একটু সতর্ক হলে কাউকে অসম্মান করার পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা সম্ভব। যাকে ভালবাসতে চাই, তাকে শুধু মুখে মুখে না,  বরং মন থেকেই ভালবাসতে চাই। আর তিনি আমাদের কাছে এমন একজন মানুষ, যিনি সামনে-পিছনে, সাক্ষাতে-অসাক্ষাতে সর্বদা সম্মান আর ভালবাসার পাত্র। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন কখনোই বঙ্গবন্ধু সহ আরো যতসংখ্যক সম্মান আর ভালবাসার পাত্র ছিলেন, আছেন, থাকবেন, তাদের কে অসম্মান করা হয়, এরকম কাজ থেকে আমাকে বিরত রাখেন।
    সর্বশেষে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর কথাটি বলতে ইচ্ছা করছে, “আমি হিমালয় দেখিনি। কিন্তু আমি শেখ মুজিবকে দেখেছি।” এই কথাটি আমার কাছে শতভাগ যথার্থই মনে হয়। তিনি আসলেই বাংলাদেশের জন্য একটি হিমালয় ছিলেন। ❤❤ শ্রদ্ধা আর ভালবাসা অবিরাম 

No comments

Theme images by Lingbeek. Powered by Blogger.