Header Ads

Header ADS

একটুখানি কষ্টকে সঙ্গে নিয়ে পথ চলা।

ছোট বেলা থেকেই টাকা-পয়সার দিক দিয়ে যথেষ্ট হিসেবি ছিলাম। সপ্তাহে প্রায় দু-তিন দিন আমাকে বাজারে যেতে হতো। যদিও আমার চেয়ে আমার বড় ভাই বেশি যেত। খরচ বেশি হয়েছে বলে কখনো একটা টাকাও বেশি নিতাম না। বাজার শেষে যা অতিরিক্ত থাকতো, তা আবার বাব-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতাম। যদি কখনো টাকা নিতাম বা না বলে খরচ করতাম, তা আবার বাড়িতে এসে বলতাম। নিজের ক্ষেত্রেও যে পরিমাণ টাকার প্রয়োজন হতো, ঠিক সেই পরিমাণই বলতাম। কখনো কখনো বেশি টাকা চাইতে খুব ইচ্ছা করতো। কিন্তু পরক্ষনেই ভাবতাম, প্রয়োজনের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ টাকা নিচ্ছি, তাতেই তো বাবা-মাকে অনেক কষ্ট দেয়া হয়ে যাচ্ছে। আরো যদি বেশি চাই, তবে তো তাদের উপর আরো বেশি কষ্ট চাঁপানো হয়ে যাবে। যে টাকার দরকার হতো, সেটা চাইতে গিয়েও আগে ভাবতাম যে, টাকাটা আমার বেশি প্রয়োজন নাকি বাবার জন্য বেশি প্রয়োজন? আমি যদি টাকাটা না নিয়ে পারতাম, তবে নিতাম না। ভাবতাম তাঁর প্রয়োজনটাই আগে পূরণ হোক। আর এই অভ্যাসটা এখনো রয়েই গেছে। বাবার প্রয়োজনটাকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে যতটা না কষ্ট হতো বা হয়, তার চেয়ে বেশি আনন্দ পেতাম আর এখনো পাই। ঠিক যখন বুঝতে পারতাম আর এখনো পারি যে, আমার টাকা না নেওয়ার কারণে বাবা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনটা মেটাতে পেরেছে। অনেকেই হয়তোবা ভাববে যে বাবার প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেয়ার মাঝে আবার কি কষ্ট থাকতে পারে? হয়তোবা উত্তর খুঁজে পাচ্ছেননা। যদি আমি বলে দেই, তবে পাবেন তাইনা? বলবো, আর বলবো বলেই এতক্ষণ উপরের কথাগুলো শোনালাম।

প্রতিটি সন্তানেরই তাদের বাবা মায়ের কাছে বিভিন্ন চাওয়া-পাওয়ার থাকে। সুন্দর কোন জামা দেখলে সেটা কেনার, সুন্দর কোন খেলনা দেখলে সেটা কেনার, সুন্দর ও মজার কোন খাদ্য দেখলে সেটা খাওয়ার। এ রকম আরো অনেক কিছু। যারা বাবা হয়েছেন, তারা নিশ্চয়ই বোঝেন যে, বাবা মায়ের কাছে সন্তানদের চাওয়া-পাওয়ার তালিকাটা কত বিশাল হতে পারে। তাই যারা এখনো বিয়ে করেননি, বা বিয়ে করলেও সন্তানাদি হয়নি, হবে, তারা প্রস্তুতি নেন। তা নাহলে বুঝতে পারবেন সন্তানদের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করার ব্যর্থতার যন্ত্রণা কতটা বেদনার্ত আর কতটা মর্মান্তিক হতে পারে। আর সন্তানেরাও কতটা কষ্ট পেতে পারে। আপনি হয়তোবা সেটি বুঝবেন না। কারণ, আপনার হয়তোবা অনেক টাকা আছে বা যখন সন্তানাদি হবে তখন আপনার অনেক টাকা হবে। (আর হওয়াই উচিৎ)। কিন্তু আমার বাবার টাকা যে লিমিটেড। তাই আমি বুঝি, বাবা-মায়ের কাছ থেকে চাহিদা মোতাবেক কিছু না পাওয়ার যন্ত্রণা। কোন কিছু চাওয়ার আগে ভাবতাম যে, যদি তারা আমাকে সেটা না দিতে পারেন, তবে তারা নিশ্চয়ই কষ্ট পাবেন। আমি তো পাবোইনা বরং শুধু শুধু তাদের কষ্টটাকে আরো বাড়িয়ে কি হবে। তার চেয়ে বরং ইচ্ছেটা নিজের মাঝেই চাঁপা পরে থাক। খারাপ লাগাটা নিজের মাঝেই আবদ্ধ থাক। হয়তোবা ভাবছেন, ছোটবেলায়ও এতকিছু বুঝা সম্ভব? আমি বলছি, হ্যাঁ সম্ভব। আর সম্ভব বলেই পরম-করুণাময় আল্লাহর রহমতে আজ এতদূর পর্যন্ত আসতে পেরেছি


 বাড়ি থেকেই দাখিল পাস করেছি। পরে জেলা সদরের মাঝে অবস্থিত একটি ছোটখাটো মাদ্রাসাতে যখন আলিমে পড়তাম, তখন অন্যের বাড়িতে লজিন থাকতাম। বাড়ী থেকে আসার পথে বাবা-মা পঞ্চাশ বা একশো টাকা হাতে ধরিয়ে দিত। মনে করতাম, এই আমার জন্য যথেষ্ঠ। আরো প্রয়োজন থাকলেও তারা এর চেয়ে বেশি দিতে পারবেনা। তাই আর চাওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি। কিন্তু প্রয়োজন ছিল বুঝতাম, যখন লজিন বাড়ি থেকে বের হয়ে মাদ্রাসার দিকে যেতাম, বাজারে যেতাম, বন্ধুদের সাথে মিশতাম। কখনো কখনো অপমান হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য বন্ধুদের সাথে মিশতে চাইতাম না। ওরা হয়তোবা আমাকে তখন ভিন্ন কিছু ভাবতো। হয়তোবা আন সোস্যাল কিংবা কৃপন। ভাবতাম কি ভাবে ওরা ভাবুক। আমার অবস্থাটা তো আর ওরা জানেনা। এভাবেই আলিম পাস করার পর দুঃস্বপ্নটাই স্বপ্ন হয়ে পূরণ হওয়ার মাধ্যমে ই,বি তে ভর্তি হওয়া।চলবে.....

No comments

Theme images by Lingbeek. Powered by Blogger.