বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ (সর্বশেষ সংশোধিত)
আইনের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ঃ-
⧪ নাম ঃ- সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮।
⧪ কার্যকর ঃ- ১লা নভেম্বর ২০১৯।
⧪ কার্যকরকারী সংস্থা ঃ- বাংলাদেশ পুলিশ।
⧪ প্রযোজ্যতা ঃ- পুরো বাংলাদেশ।
⧪ বৈশিষ্ট ঃ- পুরোনো আইনের চেয়ে তুলনামূলক বেশি শাস্তি।
⧪ শাস্তির আওতায় আসবে ঃ- সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অমান্যকারী প্রত্যেক ব্যক্তি।
সংক্ষিপ্ত আলোচনা ঃ-
আমরা জানি, আমাদের দেশ একটি ছোট্ট ও জনবহুল দেশ। জনবহুল দেশে স্বভাবতই মানুষের বিচরণ বেশি হবে। পথে, ঘাটে, মাঠে সর্বত্রই যেন শুধু মানুষের বিচরণ। যেখানে মানুষ বেশি, সেখানে যানবাহনের পরিমাণ বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। এতো জনবহুল দেশ হওয়া স্বত্বেও জন সংখ্যার বৃদ্ধির হারের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে শিক্ষার হার এখনো যথেষ্ট বেড়ে উঠেনি। তাছাড়া যে সকল ড্রাইভারেরা গণ পরিবহন ও ছোট খাট যান পরিচালনা করেন, তাদের বেশিরভাগই ততোটা শিক্ষিত নন। তারা জানেন না ট্রাফিক আইন, মেনে চলেন না পথ চলাচলের আইন কানুন। এদিকে জনসাধারনদের যারা রাস্তাঘাটে পারাপার হন, তাদের মাঝে যথেষ্ট সচেতনতা পরিলক্ষিত হয় না। রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন ব্যস্ততম স্থানে ফুট ওভার ব্রীজ থাকা স্বত্বেও জন সাধারণ যত্র তত্র রাস্তা পারাপার হন। যেখানে কোন প্রকার ফুট ওভার ব্রীজ নেই সেখানে জেব্রা ক্রোসিং থাকা স্বত্বেও মানুষেরা যত্রতত্র রাস্তা পার হন। এদিকে রাস্তায় তো অবিরাম চলছে ফিটনেস বিহীন গাড়ি, রেজিষ্ট্রেশন বিহীন গাড়ি, রুট পারমিট বিহীন গাড়ি। আর এসবের সঙ্গে আছে লাইসেন্স বিহীন ড্রাইভার। যাদের লাগামহীন অনিয়ন্ত্রিতভাবে গাড়ি চালানোর দরুন, আর সাধারণ মানুষের যত্রতত্র রাস্তা পারাপার হ্ওয়ার দরুন দিন দিন বেড়েই চলেছে সড়ক দূর্ঘটনা। প্রতিনিয়ত হতাহত হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। এসব দূর্ঘটনার লাগাম টেনে ধরার জন্যই পুরাতন আইনকে সংশোধন করে শাস্তির পরিমাণকে বৃদ্ধি করে নতুন আঙ্গিকে রুপ দেয়া হয়েছে। নাম দেয়া হয়েছে “সড়ক পরিবহন আইন -২০১৮”। এই আইনের সঠিকভাবে পুরোপুর বাস্তবায়নে আশা করা যায় সড়ক দূঘটনার পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। আমরা সাধারণ জনগন হিসেবে এই প্রত্যাশাই ব্যক্ত করছি।
⧪ নতুন আইনে আইন অমান্য করার শাস্তি ঃ-
আমরা ইতোঃমধ্যে জেনেছি যে াপূর্বের আইনের চেয়ে নতুন আইনে শাস্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ পর্যায়ে আমরা নতুন আইনে কার্যকরকৃত শাস্তি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা নিব। দেখা যাক, নতুন এ আইনে কি কি শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে......
১। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে - অনধিক ২৫০০০ (পঁচিশ হাজার) টাকা জরিমানা বা ৬ (ছয়) মাস জেল।
২। কর্তৃপক্ষ ব্যতীত ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রস্তত করলে - অনধিক ১ (এক) থেকে ৫ (পাঁচ) লাখ টাকা জরিমান বা ৬ (ছয়) মাস থেকে ২ (দুই) বছর জেল।
৩। রেজিষ্ট্রেশন বিহীন গাড়ি চালালে - অনধিক ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা জরিমানা বা ৬ মাস জেল।
৪। ফিটনেস বিহীন গাড়ি চালালে - অনধিক ২৫,০০০ টাকা জরিমান বা ৬ (ছয়) মাস জেল।
৫। রুট পারমিট বিহীন গাড়ি চালালে - অনধিক ২০,০০০ (বিশ হাজার) টাকা জরিমানা বা ৩ (তিন) মাস জেল।
৬। টেক্সটোকেন ব্যতীত গাড়ি চালালে - অনধিক ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা জরিমানা।
৭। ট্রাফিক সাইন বা সংকেত অমান্য করে গাড়ি চালালে - অনধিক ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা জরিমানা।
৮। অতিরিক্ত গতিতে গাড়ী চালালে - অনধিক ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা জরিমানা।
৯। হেলমেট ব্যতীত গাড়ী চালালে - অনধিক ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা জরিমানা।
১০। অবৈধ পার্কিং করে গাড়ী রাখলে - অনধিক ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা জরিমানা।
১১। উল্টোপথে গাড়ী চালালে - অনধিক ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা জরিমানা।
১২। যত্রতত্র রাস্তা পার হলে - অনধিক ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা জরিমানা।
১৩। সিটবেল্ট না থাকলে বা না বাঁধলে - অনধিক ৫০০০ (পাঁচ হাজার) টাকা জরিমানা।
১৪। চলক ফোনে কথা বললে - অনধিক ৫০০০ (পাঁচ হাজার) টাকা জরিমানা।
উপরোক্ত পরিসংখ্যান থেকে আমরা অনায়াসেই বুঝতে পারি যে, সরকার সড়ক দূর্ঘটনা এড়াতে বদ্ধপরিকর। সেই সাথে তারা আইন পাশের মাধ্যমে পদক্ষেপও নিয়েছে। আমরা সাধারণ জনগণ হিসেবে এর যথাযথ বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করছি।
⧪ তুলনামূলক আলোচনা ঃ-
⧪ নতুন আইনে আইন অমান্য করার শাস্তি ঃ-
আমরা ইতোঃমধ্যে জেনেছি যে াপূর্বের আইনের চেয়ে নতুন আইনে শাস্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ পর্যায়ে আমরা নতুন আইনে কার্যকরকৃত শাস্তি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা নিব। দেখা যাক, নতুন এ আইনে কি কি শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে......
১। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে - অনধিক ২৫০০০ (পঁচিশ হাজার) টাকা জরিমানা বা ৬ (ছয়) মাস জেল।
২। কর্তৃপক্ষ ব্যতীত ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রস্তত করলে - অনধিক ১ (এক) থেকে ৫ (পাঁচ) লাখ টাকা জরিমান বা ৬ (ছয়) মাস থেকে ২ (দুই) বছর জেল।
৩। রেজিষ্ট্রেশন বিহীন গাড়ি চালালে - অনধিক ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা জরিমানা বা ৬ মাস জেল।
৪। ফিটনেস বিহীন গাড়ি চালালে - অনধিক ২৫,০০০ টাকা জরিমান বা ৬ (ছয়) মাস জেল।
৫। রুট পারমিট বিহীন গাড়ি চালালে - অনধিক ২০,০০০ (বিশ হাজার) টাকা জরিমানা বা ৩ (তিন) মাস জেল।
৬। টেক্সটোকেন ব্যতীত গাড়ি চালালে - অনধিক ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা জরিমানা।
৭। ট্রাফিক সাইন বা সংকেত অমান্য করে গাড়ি চালালে - অনধিক ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা জরিমানা।
৮। অতিরিক্ত গতিতে গাড়ী চালালে - অনধিক ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা জরিমানা।
৯। হেলমেট ব্যতীত গাড়ী চালালে - অনধিক ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা জরিমানা।
১০। অবৈধ পার্কিং করে গাড়ী রাখলে - অনধিক ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা জরিমানা।
১১। উল্টোপথে গাড়ী চালালে - অনধিক ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা জরিমানা।
১২। যত্রতত্র রাস্তা পার হলে - অনধিক ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা জরিমানা।
১৩। সিটবেল্ট না থাকলে বা না বাঁধলে - অনধিক ৫০০০ (পাঁচ হাজার) টাকা জরিমানা।
১৪। চলক ফোনে কথা বললে - অনধিক ৫০০০ (পাঁচ হাজার) টাকা জরিমানা।
উপরোক্ত পরিসংখ্যান থেকে আমরা অনায়াসেই বুঝতে পারি যে, সরকার সড়ক দূর্ঘটনা এড়াতে বদ্ধপরিকর। সেই সাথে তারা আইন পাশের মাধ্যমে পদক্ষেপও নিয়েছে। আমরা সাধারণ জনগণ হিসেবে এর যথাযথ বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করছি।
⧪ তুলনামূলক আলোচনা ঃ-
এ
পর্যন্ত আমরা “সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮” তে বর্ণিত
শাস্তির বিধান সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা একটু তুলনামূলক বিচার করে দেখব, আসলে শাস্তির
পরিমাণ পূর্বের আইনের চেয়ে কতটুকু বাড়ানো হয়েছে। নিচের টেবিলটিতে লক্ষ করি….
ক্রমিক
|
অপরাধের
ধরণ
|
পুরোনো
আইনে শাস্তি
|
নতুন
আইনে শাস্তি
|
০১
|
ড্রাইভিং লাইসেন্স
ছাড়া গাড়ী চালালে-
|
অনধিক ৫০০ টাকা জরিমানা
বা ৪ মাস জেল।
|
অনধিক ২৫,০০০ টাকা
জরিমানা বা ৬ মাস জেল।
|
০২
|
ভূয়া লাইসেন্স রাখলে-
|
অনধিক ৫০০ টাকা জরিমানা
বা ৪ মাস জেল।
|
অনধিক ১ থেকে থেকে
৫ লাখ টাকা জরিমানা বা ৬ মাস থেকে ২ বছর জেল।
|
০৩
|
রেজিষ্ট্রেশন বিহীন
গাড়ী চালালে-
|
অনধিক ২,০০০ টাকা জরিমানা
বা ৩ মাস জেল।
|
অনধিক ৫০,০০০ টাকা
জরিমানা বা ৬ মাস জেল।
|
০৪
|
ফিটনেস বিহীন গাড়ী
চালালে-
|
অনধিক ২,০০০ টাকা জরিমানা
বা ৩ মাস জেল।
|
অনধিক ২৫,০০০ টাকা
জরিমানা বা ৬ মাস জেল।
|
০৫
|
রুট পারমিট বিহীন গাড়ী
চালালে-
|
অনধিক ২০,০০০ টাকা
জরিমানা বা ৩ মাস জেল।
|
|
০৬
|
টেক্সটোকেন ছাড়া গাড়ূী
চালালে-
|
অনধিক ১০,০০০ টাকা
জরিমানা।
|
|
০৭
|
ট্রাফিক সংকেত অমান্য
করলে-
|
অনধিক ২০০ টাকা জরিমানা
|
অনধিক ১০,০০০ টাকা
জরিমানা।
|
০৮
|
অতিরিক্ত গতিতে গাড়ী
চালালে-
|
অনধিক ৩০০ টাকা জরিমানা
|
অনধিক ১০,০০০ টাকা
জরিমানা।
|
০৯
|
হেলমেট ব্যতীত গাড়ী
চালালে-
|
অনধিক ২০০ টাকা জরিমানা
|
অনধিক ১০,০০০ টাকা
জরিমানা।
|
১০
|
উল্টোপথে গাড়ী চালালে-
|
অনধিক ২০০ টাকা জরিমানা
|
অনধিক ১০,০০০ টাকা
জরিমানা।
|
১১
|
যত্রতত্র রাস্তা পারাপার
হলে-
|
অনধিক ২০০ টাকা জরিমানা
|
অনধিক ১০,০০০ টাকা
জরিমানা।
|
১২
|
অবৈধ পার্কিং করলে-
|
অনধিক ২০০ টাকা জরিমানা
|
অনধিক ৫,০০০ টাকা জরিমানা।
|
১৩
|
সিটবেল্ট না বাঁধলে-
|
অনধিক ২০০ টাকা জরিমানা
|
অনধিক ৫,০০০ টাকা জরিমানা।
|
১৪
|
চালক ফোনে কথা বললে-
|
অনধিক ২০০ টাকা জরিমানা
|
অনধিক ৫,০০০ টাকা জরিমানা।
|
টেবিল :- পূর্বের ও বর্তমান
আইনে শাস্তির তুলনামূলক চিত্র।
উপরোক্ত টেবিলটি পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই যে, পূর্বের আইনের তুলনায় এই আইনে শাস্তির পরিমাণ অনেক বেশি। আসুন, আমরা প্রত্যেকে একজন বাংলাদেশি হিসেবে বাংলাদেশে কার্যকর সড়ক পরিবহন আইন সহ অন্য সকল আইন মান্য করে চলি। দেশ দেশের মানুষকে ভালবেসে পথ চলার জন্য বিদ্যমান আইন সম্পর্কে জেনে নিজেকে নিরাপদে পথ চলতে সহায়তা করি। সেই সাথে অনাকাঙ্খিত শাস্তি ও জরিমানা এড়াতে মোটরযান ব্যবহারের সময় প্রযোজনীয় কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স সঙ্গে রাখি এবং ফিটনেস বিহীন, রেজিষ্ট্রেশন বিহীন, রুট পারমিট বিহীন, টেক্সটোকেন বিহীন মোটরযান ব্যবহারে বিরত থাকি। সবার জন্য শুভ কামনা। নিজেকে ভাল রাখুন, অন্যকেও ভাল থাকতে দিন। ধন্যবাদ পাঠক মহোদয়কে।
No comments